ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া এমন একটি অসুখ যা “ট্রাইজেমিনাল” নামক স্নায়ু বরাবর তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি করে । অর্থাৎ আমাদের কপাল, গাল অথবা চোয়ালের দিকে ব্যাথা হয় এই ব্যথার অনুভূতি আনেক টা ছুরির আঘাতের মতো বা বৈদ্যুতিক শকের মতো হয় ।যা কখনো কখনো কথা বলতে গেলে , খাবার খেতে গেলে বা দাঁত মাজার সময় হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। ।
ট্রাইজেমিনাল নার্ভের তিনটি শাখা রয়েছে যা কপাল, গাল এবং চোয়ালে সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করে।
“ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া” কেন হয় ?
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে কোনো কোনো সময় দেখা যায় যে আমাদের ব্রেন এর আর্টারি, ট্রাইজেমিনাল নার্ভের উপরে চাপ দেয়। ফলে ট্রিজেমিনাল নার্ভের উপরের যে আবরণ থাকে টা নষ্ট হয়ে যায় । আর তার থেকে ব্যাথা শুরু হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই রকম কোনো কারণ ছাড়াই ট্রাইজেমিনাল নার্ভ এর ব্যাথা শুরু হতে পারে।
কি কি বিশেষ লক্ষণ এই রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় ?
ব্যাথার ধরণ : এই ব্যথা সাধারণত তীব্র এবং ধারালো হয়। যা ছুরির আঘাতের মতো বা বৈদ্যুতিক শকের মতো অনুভব করতে পারে রোগীরা ।
ব্যাথার জায়গা:এটি সাধারণত মুখের একপাশে হয়ে থাকে । বেশির ভাগ সময়ে মুখের এক পাশে দেখা যায় ,আবার কিছুক্ষেত্রে ডান এবং বাম উভয় দিকেই ঘটতে পারে ।
ব্যাথার অবস্থান : মুখের যে অংশে ট্রাইজেমিনাল নার্ভের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শাখা রয়েছে সেই জায়গায় হতে শুরু করে । মূলত কপাল থেকে শুরু করে চোখ ,গাল ,চোয়াল ,মাড়ি ও দাঁত এসব এই ব্যথায় প্রভাবিত হয় ।
ব্যাথার সময়কাল : ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া হঠাৎ করে শুরু হয় যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে ।এছাড়া আক্রান্ত রোগীরা বারবার এই ব্যথা অনুভব করে ।
ট্রিগার factor : হালকা স্পর্শ ,কিছু চিবানো,কথা বলা ,দাঁত মাজা এইসব নিত্য কাজে এই ব্যাথা অসুবিধে ঘটায় ।
কোন কোন বিষয় গুলো “ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া” এর জন্যে দায়ী হতে পারে ?
বয়স : যেকোনো বয়সে হতে পারে তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৫০ বছর এর পর হয় ।
লিঙ্গ: পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আক্রান্ত হয়ে থাকে,মহিলাদের একটু বেশী দেখা যায় ।
Multiple Sclerosis : এটি একটি রোগ যা স্নায়ুর myelin শীথ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এই রোগে যারা আক্রান্ত তাদের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
অন্যান্য স্নায়ুর রোগ : এছাড়া অন্য কোনো রোগ যেমন ট্রাইজেমিনাল নার্ভ বা মাথার কোনো ত্রুটিগত অবস্থা ও এর জন্যয়ে হতে পারে ।
দুর্ঘটনাজনিত অবস্থা : অনেক সময় মুখের কোনো দুর্ঘটনায় trigeminal nerve এ আঘাত হলে এই রোগ হয় ।
কিভাবে এই ব্যথা ডাক্তার রা চিনতে পারেন ?
ব্যথার ডাক্তারবাবুরা মুখের ব্যথার প্রকৃতি, সময়কাল এবং ট্রিগারগুলি বুঝে রোগীকে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন । মুখের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকাভাবে স্পর্শ করা হয় যেখানে রোগীরা ব্যথা অনুভব করে এবং কোনো নির্দিষ্ট উদ্দীপনা দ্বারা ব্যথা শুরু হয়েছে কিনা জেনে নিয়ে বিশেষ নির্দেশ দেন । এছাড়া মাথার MRI এর মাধ্যমে এই রোগের ডায়গনসিস করা হয় ।
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার চিকিত্সা মূলত রোগীর ব্যাথার অবস্থার ওপর ভিত্তি করে শুরু করা হয়ে থাকে । ব্যাথার তীব্রতা ও ধরণ অনুযায়ী ডাক্তাররা কিছু ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দিয়ে থাকেন যেমন :
অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ: এই ওষুধগুলি স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে ব্যথা কমাতে পারে ।
অন্যান্য ওষুধ: ব্যাক্লোফেন, একটি পেশী শিথিলকারী ওষুধ, এবং কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
MVD: এই সার্জারি করে trigeminal nerve নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
RADIOFREQUENCY ABLATION : রেডিও ফ্রকোয়েন্সি আব্লেশন ট্রাইজেমিনাল রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা। এর মাধ্যমে এই তীব্র ব্যথা দীর্ঘস্থাযী ভাবে কমানো সম্ভব।
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া প্রতিরোধের কোনো নিশ্চিত উপায় নেই। তবে যে বিষয়গুলি মনে রাখা দরকার সেগুলি হল :
রোগের ব্যাথা ডাক্তারের কাছে ধরা পড়লে নিয়মিত শরীরের চেক আপ করাতে হবে ।
সঠিক ভাবে ও নিয়মমাফিক ডাক্তারের দেওয়া ওষুধগুলো মেনে চলতে হবে ।
ট্রিগার factor গুলো চিনে ফেলতে পারলে সেগুলি যত তা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে যেমন শক্ত জিনিস চিবানো, কোনরকম স্পর্শ , ঠান্ডা হাওয়া ইত্যদি।
মুখের সঠিক নজর দেওয়া যেমন দাঁত এর চেক আপ করা দরকার ।
সময়ব্যথী পেইন ক্লিনিকে "ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া" রোগের চিকিৎসা করা হয়। এখানে রেডিওফ্রিকোয়েনকি ablation এর মাধমে দীর্ঘ স্থায়ী ভাবে ব্যাথা কমানো হয় ।
Comments